SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - নাগরিক সমস্যা ও আমাদের করণীয় | NCTB BOOK

৬. নারী নির্যাতন : কারণ ও প্রতিকার

 

নারী নির্যাতন কী?

বেইজিং ঘোষণা অনুযায়ী, নারী নির্যাতন বলতে এমন যেকোনো কাজ বা আচরণকে বোঝায়, যা নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় এবং যা নারীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া, কোনো ক্ষতি সাধনের হুমকি, জোরপূর্বক অথবা খামখেয়ালিভাবে সমাজ অথবা ব্যক্তিগত জীবনে নারীর স্বাধীনতা হরণ নারী নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত। নিচে নারী নির্যাতনের দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো, যাতে আমাদের দেশের নারী নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে ।

কন্যাশিশুদের উপেক্ষা:
ঘটনা ১:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ে মীনা । শৈশব থেকেই সে ছিল খুব মেধাবী । তার এক বছরের বড় ভাই তারই সাথে এক ক্লাসে পড়ত । এইচএসসি পাস করার পর মীনা সিলেট মেডিকেল কলেজ ও তার ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল । মীনার বাবা তার ছেলেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করালেও মীনাকে খরচের অজুহাত দেখিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। পারিবারিক বঞ্চনার কারণে মীনার ডাক্তার হওয়ার আজন্ম লালিত স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে ।

 

যৌতুক:
ঘটনা ২: নবম শ্রেণির ছাত্রী মর্জিনা গ্রামে বসবাস করে। মর্জিনার বাবা পৈতৃক জমি থেকে যে ফসল পায় তা দিয়ে কোনোভাবে পরিবারের খরচ মেটায় । চার ভাইবোনের পরিবারে মর্জিনা মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তার বাবা তাকে এক মুদি দোকানদারের সাথে বিয়ে দেয়। কিন্তু তার স্বামী মন দিয়ে দোকানদারি করে না বলে দোকানে লোকসান হতে থাকে । বিয়ের কিছুদিন পর থেকে মর্জিনার স্বামী তাকে তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলতে থাকে। বছর দুই পরে সে বিদেশে যাবে বলে মর্জিনাকে বাবার বাড়ি থেকে জমি বেচে দুই লক্ষ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় । তার শ্বশুরবাড়ির সবাই স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলতে থাকে । এ নিয়ে প্রায়ই স্বামীর বাড়ির লোকের সঙ্গে মর্জিনার বিরোধ চলতে থাকে । এরপর হঠাৎ একদিন মর্জিনাকে তার শোবার ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ।

 

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ:
নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে । এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পুরুষরা নারীকে মনে করে অবলা অর্থাৎ নিজেকে রক্ষা করতে অক্ষম । ফলে নারীর স্থান হচ্ছে সংসারের চৌহদ্দির মধ্যে । একই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পুরুষরা নারীদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে অবহেলা করেছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত নারীদের অবস্থা কিছুটা উন্নত হলেও সামগ্রিকভাবে নারীরা এখনও অবহেলিত ও নির্যাতিত । 

১. অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব:
অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা নারীর অবস্থানকে সমাজে ও পরিবারে শক্ত করে । কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী এখনো স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল । ফলে, সংসারের কোনো কেনাকাটা, খরচ করা বা শখ পূরণের জন্য নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের বাবা, ভাই ও স্বামীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতে হয়। এখনও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার অভাবে অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয় ।

২. সচেতনতার অভাব:
আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র । দরিদ্র পরিবারে নারীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত । ফলে সে তার অধিকার সম্পর্কে থাকে অসচেতন। আর এই সুযোগে স্বামী, আত্মীয়স্বজন এমনকি সমাজ নারীর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে থাকে ।


নারী নির্যাতন রোধে করণীয়:
সমাজে নারীর উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী নির্যাতন রোধ করা অত্যাবশ্যক। নারী নির্যাতনের কারণগুলো প্রতিকারের মাধ্যমে তা সম্ভব । এজন্য নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । এছাড়াও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নিচের পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ।

১. আইনের কঠোর প্রয়োগ : নারী নির্যাতন রোধে বিদ্যমান আইনের কঠোর বাস্তবায়ন দরকার । আইনের মধ্যে যদি কোনো দুর্বলতা থেকে থাকে তবে তা সংশোধন করে আইনকে আরও শক্তিশালী করা সরকারের গুরুদায়িত্ব। নারী নির্যাতনকারীদের যথাযথভাবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

২. সচেতনতা বৃদ্ধি : পরিবার, স্কুল ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনে নারী নির্যাতন বিরোধী বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, গান, আলোচনা সভা ইত্যাদির মাধ্যমে নারী নির্যাতনকারীর শাস্তি ও পরিণতি তুলে ধরতে হবে । এটা যে একটা ঘৃণ্যতম অপরাধ এবং সামাজিক উন্নয়নের পথে অন্তরায় তা বুঝতে হবে। নারী পুরুষ
সকলে মিলে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে ।

৩. আইনি সহায়তা : অনেক ক্ষেত্রে নারীরা আদালতে নির্যাতনের সঠিক বিচার পায়না। বিশেষ করে দরিদ্র নারীরা অর্থের অভাবে আদালতে যেতে পারে না । তাই এ ধরনের নারীদের জন্য রাষ্ট্র এবং বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক আইনী সহায়তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে ।